ফ্রানসাইজিনং

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - ব্যবসায়ের আইনগত দিক | | NCTB BOOK

ফ্রানসাইজিং (Franchising)


বর্তমানে ফ্রানসাইজিং পদ্ধতিতে ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো খ্যাতনামা কোম্পানির নাম ব্যবহার এবং এর পণ্য তৈরি, বিক্রি বা বিতরণ করার অধিকারকে ফ্রানসাইজিং বলে। এ ধরনের ব্যবসার উদাহরণ হলো ব্যান্ড বক্‌স কোম্পানি, পিজ্জাহাট, কেএফসি উইম্পি, কেনটাকি ইত্যাদি। ফ্রানসাইজিং ব্যবসায় দুটি পক্ষ থাকে, ফ্রানসাইজর ও ফ্রানসাইজি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমেরিকার কেএফসি হচ্ছে ফ্রানসাইজর এবং বাংলাদেশের স্ট্রান্সকম লিঃ হচ্ছে ফ্রানসাইজি। ফ্রানসাইজিং ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো :
১) ফ্রানসাইজর ও ফ্রানসাইজি-এর মধ্যে চুক্তিপত্র।
২) ব্র্যান্ডেড পণ্য বা সেবা
৩) পণ্য বা সেবা স্বীকৃত মান ও প্রক্রিয়া অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ফ্রানসাইজার কর্তৃক মনিটরিং।


ফ্রানসাইজ চুক্তি
ফ্রানসাইজিং ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ফ্রানসাইজিং চুক্তি যা ফ্রানসাইজি ও ফ্রানসাইজারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। পুঁজির পরিমাণ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনায় সাহায্য, ফ্রানসাইজ এলাকা ইত্যাদি ভেদে চুক্তির ধারাগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে সকল ফ্রানসাইজিং চুক্তির মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে :

  1. ফ্রানসাইজি প্রথমে নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি এবং পরে বিক্রয়ের উপর নির্দিষ্ট হারে মাসিক ফি প্রদান করে। প্রতিদিনের হিসেবে ক্লানসাইজি ফ্রানসাইজারের পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের অধিকার পায়।
  2. ফ্রানসাইজি অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিনিয়োগ করতে রাজি থাকবেন।
  3. উভয় পক্ষের প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন। আয়ই হবে ব্যবসার সাফল্য নির্ধারণের মাপকাঠি । সফল হতে হলে ব্যবস্থাপনা হতে হবে দক্ষ, পণ্য বা সেবা হতে হবে উত্তম ।
  4. ফি প্রাপ্তির দিন থেকেই ফ্রানসাইজার আয় করতে থাকবে। কোনো কোনো সময় ফ্রানসাইজির কার্য অধিকার দেওয়ার আগেই ফ্রানসাইজার ফি দাবি করতে পারে।
  5. চুক্তিতে কোনো কোনো সময় ফ্লানসাইজার নিজেই ব্যবসা এলাকা নির্ধারণ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং এসবের মালিকানা নিজের কাছে রাখতে পারে।
  6. ব্যবসা যদি ফ্রানসাইজরের মানদণ্ড অনুযায়ী সফল না হয় তাহলে যে কোনো সময় চুক্তিপত্র বাতিল করে দিতে পারে।
  7. ফ্রানসাইজি শুধু ঐ আইটেমসমূহ বিক্রয় করতে পারবে যা ফ্রানসাইজর গ্রহণযোগ্য মনে করে।

চুক্তিপত্রের শর্তাবলি যদি উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হবে। ফ্রানসাইজিং প্রতিষ্ঠানের আইনগত ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন করে ব্যবসা শুরু করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যদি প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হয় তাহলে রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির কাছ থেকে নিবন্ধন করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। ফ্রানসাইজিং-এর মাধ্যমে ব্যবসায় শুরু করার অনেকগুলো সুবিধা আছে। এগুলোর মধ্যে ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাতকরণ সুবিধা, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ফ্রানসাইজরের কাছ থেকে ব্যবসায় সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া এবং যে কোনো সময় অর্থায়নের ব্যবস্থা অন্যতম। অসুবিধাগুলোর মধ্যে কড়া মনিটরিং, চুক্তিপত্রের উল্লিখিত শর্ত ভঙ্গের জন্য চুক্তি বাতিলের সম্ভাবনা এবং বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ অন্যতম। এসত্ত্বেও ফ্রানসাইজিং ব্যবস্থা নতুন নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। বিদেশে এ জাতীয় ব্যবসায় জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বাংলাদেশে এখনও তেমন জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি লাভ করেনি। বড় বড় শহরের পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতে এগুলোর শাখা বৃদ্ধি করলে ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়বে।

Content added || updated By
Promotion